
জীববৈচিত্র্যে ভরপুর কিন্তু এখন বিপর্যস্ত সোনাদিয়া দ্বীপের পরিবেশ পুনরুদ্ধারে ৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দ্বীপটির হারিয়ে যাওয়া ম্যানগ্রোভ বন ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর মাঠ পর্যায়ে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ সম্পন্ন করেছে।
‘প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বন অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক এই প্রকল্পের আওতায় দ্বীপের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, খাল ও শাখা বাঁধ অপসারণ, সৈকত সংরক্ষণ এবং ম্যানগ্রোভ ও নন-ম্যানগ্রোভ বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দ্বীপের পরিবেশ ও স্থানীয় জনগণের জীবনমান উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করা হবে।
গত ২৬ অক্টোবর পরিবেশ উপসচিব ফাহমিদা হক খানের নেতৃত্বে একটি পর্যবেক্ষক দল সোনাদিয়া দ্বীপ পরিদর্শন করে স্থানীয়দের মতামত নেয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহমুদ পাশা।
তিনি বলেন, “স্থানীয়দের পরামর্শের আলোকে দ্বীপের পরিবেশ পুনরুদ্ধারের কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে। এত সুন্দর একটি দ্বীপ ধ্বংস হয়ে যেতে দেওয়া যায় না—এ কারণেই সরকার সোনাদিয়া পুনরুদ্ধারে বহুমুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে।”
কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরের নয় হাজার বর্গকিলোমিটারের দ্বীপ সোনাদিয়া একসময় ছিল লাল কাঁকড়া, সামুদ্রিক কচ্ছপ, চামচ ঠুঁটো পাখি ও শতাধিক প্রজাতির বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। কিন্তু গত এক দশকে নির্বিচারে বন উজাড়, চিংড়ি ঘের নির্মাণ ও দখলদারির কারণে দ্বীপের জীববৈচিত্র্য প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
২০১৭ সালে ইকো-ট্যুরিজম পার্ক তৈরির নামে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) মাত্র ১ হাজার ১ টাকায় দ্বীপের ভূমি বরাদ্দ দেয় জেলা প্রশাসন। এরপর থেকেই দ্বীপে গাছ কাটা ও পরিবেশ ধ্বংসের কার্যক্রম বাড়তে থাকে। তবে পরিবেশবাদী সংস্থাগুলোর চাপ এবং উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের উদ্যোগে গত মে মাসে ভূমি মন্ত্রণালয় বেজার সেই ভূমি বন্দোবস্ত বাতিল করে, ফলে দ্বীপের ৯ হাজার ৪৬৭ একর জমি পুনরায় বন বিভাগের অধীনে ফিরে আসে।
ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস)-এর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক বলেন, একসময় সোনাদিয়ায় শত শত প্রজাতির প্রাণ-বৈচিত্র্য ছিল, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবসৃষ্ট ধ্বংসের কারণে সেগুলোর অনেকই বিলুপ্ত হয়েছে। সরকার যদি এই প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে, তবে হারানো জীববৈচিত্র্য ফিরে আসবে এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় পরিবেশ রক্ষায় তা হবে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক

পাঠকের মতামত